গাইডলাইনকি কেন কিভাবে

গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে কিভাবে ইনকাম করতে হয়

বর্তমানে অনলাইন থেকে ইনকাম করার যতগুলো উপায় বা পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে গুগল অ্যাডসেন্স। এটি ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করার সবথেকে জনপ্রিয় এবং সবার সেরা একটি মাধ্যম। তাই আজকের এই পর্বে আমি এই গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি গুগল অ্যাডসেন্স এর সাথে কাজ করতে চান তাহলে এই পর্বটি আপনার জন্য। চলুন শুরু করা যাক,

গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট কিঃ

গুগল অ্যাডসেন্স হলো বিশ্বের সব থেকে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্থ এড মিডিয়া। এটি গুগলের এমন একটি সার্ভিস যেখানে যেকেউ তার নিজের বিজনেসকে অনলাইনে প্রসার করতে পারবে। নিজের ব্যবসাকে অনলাইনে প্রচার প্রচারনা করার জন্য যেই যেই টুলস এবং অপশনের প্রয়োজন হয় তার প্রায় সবকিছু রয়েছে এই গুগল অ্যাডসেন্স এর মধ্যে। তাই বেশিরভাগ মানুষের প্রথম পছন্দ এটি।

গুগল অ্যাডসেন্স কিভাবে কাজ করেঃ

গুগল অ্যাডসেন্স এ দুই ধরনের পক্ষ থাকে।
  1. এডভারটাইজার বা বিজ্ঞাপনদাতা
  2. পাবলিশার বা প্রকাশক

এডভারটাইজাররা গুগল এড ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেয় তাদের বিজনেসকে প্রচার করার জন্য। অন্যদিকে পাবলিশাররা তাদের বিভিন্ন মাধ্যম ( ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব ) ব্যবহার করে সেখানে সেই বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার করে।

যেমন ধরুন, কেউ একজন $১০০ খরচ করে গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দিলো। তখন গুগল সেই বিজ্ঞাপনগুলো ইউটিউব এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দিবে। বিনিময়ে ইউটিউব চ্যানেলের মালিকরা ৫১% শেয়ার পাবে, গুগল নিবে বাকি ৪৯%। আর অন্যদিকে ওয়েবসাইট যদি হয় তাহলে ওয়েবসাইটের মালিকরা সেই $১০০ এর প্রায় ৬৮% শেয়ার পাবে আর বাকি ৩২% গুগল নিয়ে যাবে। আর এইভাবে দুইপক্ষই লাভবান হয়।

গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে কিভাবে ইনকাম করা যায়

গুগল অ্যাডসেন্স এর সাথে আপনি দুইভাবেই কাজ করতে পারবেন। যদি আপনার বিজনেস থাকে তাহলে সেটা প্রসার করার জন্য অ্যাডসেন্স ব্যবহার করতে পারবেন আবার ইনকাম করার মাধ্যম হিসেবেও এটাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই কারনেই সব ওয়েব সাইট মালিকগন’ই Google AdSense একাউন্ট পেতে চায়। কিন্তু যেকেউ চাইলেই অ্যাডসেন্স এর সাথে কাজ করতে পারবে না। তার জন্য অবশ্যই গুগল এডসেন্স এর Terms গুলো মেনে কাজ করতে হবে। এমন একটি সময় ছিলো যখন ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে এপ্লাই করার সাথে সাথেই এপ্প্রভাল পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন এটি একটি সোনার ডিম পাড়া হাসের মতো হয়ে গেছে। চাইলেই পাওয়া যায় না।
গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে আপনি দুইভাবে ইনকাম করতে পারবেন।
  1. ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে
  2. একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করে

আপনি যদি ভিডিও কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে একটি প্রফেশনাল ইউটিউব চ্যানেল খুলে গুগল অ্যাডসেন্স এর সাথে কাজ করতে পারেন। আর যদি লিখিত কন্টেন্ট যাকে ইন্টারনেট এর ভাষায় কন্টেন্ট রাইটিং বা ব্লগিং বলা হয় সেটা নিয়ে কাজ করতে চান তাহলে আপনার একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করার প্রয়োজন হবে। ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল দুটোতেই গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়া যায়। তবে ওয়েবসাইট থেকে ইউটিউব চ্যানেলের এডসেন্স একাউন্ট পাওয়া তেমন কষ্টসাধ্য নয়। এটা খুব সহজেই পাওয়া যেতে পারে। ৪-৫ ভিডিও আপলোড করলেই এডসেন্স একাউন্টের অনুমোদন পাওয়া সম্ভব যদি ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়। ইউটিউব চ্যানেল থেকে গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য অবশ্যই গত ১ বছরের মধ্যে ৪ হাজার ঘণ্টা ওয়াচটাইম এবং ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার লাগবে। আর ওয়েবসাইটে ৩০-৪০টি একদম ইউনিক কন্টেন্ট এবং কপিরাইটমুক্ত লেখা পাবলিশ করতে হবে। এছাড়াও আজকাল blogger থেকেও সহজেই এডসেন্স এর জন্য আবেদন করা যায় যেহেতু এটি একটি গুগলের সার্ভিস।

গুগল এডসেন্স একাউন্ট এর প্রকারভেদঃ

এডসেন্স একাউন্ট মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
  1. হোস্টেড একাউন্ট
  2. নন-হোস্টেড একাউন্ট

১। হোস্টেড একাউন্টঃ

ইউটিউব থেকে প্রাপ্ত এডসেন্স একাউন্টকে বলা হয় হোস্টেড একাউন্ট। অর্থাৎ এই একাউন্ট ইউটিউবের সাথে সংযুক্ত। আর যেহেতু এটি ইউটিউবের সাথে যুক্ত তাই এর লাভের কিছু অংশ ইউটিউব পেয়ে থাকে।

২। নন হোস্টেড একাউন্টঃ

ওয়েব সাইট থেকে যেই এডসেন্স পাওয়া যায় তাকে নন-হোস্টেড একাউন্ট বলা হয়। এই একাউন্ট সম্পূর্ণ নিজের তত্বাবধায়নে পরিচালিত হয়। মানে ইউটিউব থেকে যেই একাউন্ট পাওয়া যায় সেটির পরিচালনা গুগল নিজেই করে কিন্তু ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে যেই একাউন্ট পাওয়া যায় সেটির পরিচালনা সবকিছু ওয়েবসাইট এর মালিক করতে পারে, যেমন এড ম্যানেজমেন্ট।

এডসেন্স একাউন্ট পাওয়া শর্তাবলীঃ

একটি গুগল অ্যাডসেন্স পেলেই শুধু হয় না। সেটির রক্ষা করাটাও অনেক ঝামেলার। নিয়ম-কানুন যদি সঠিকভাবে না মানা হয় তাহলে যেকোনো সময় একাউন্ট সাসপেন্ড হয়ে যেতে পারে। তবে যদি আপনি নিয়ম গুলো জেনে সঠিকভাবে কাজ করেন তাহলে খুব সহজেই Google AdSense থেকে সারা জীবন আয় করতে পারবেন। নিচে কিছু সাধারন নিয়মাবলী দিয়ে দিলাম যেগুলো প্রাথমিক অবস্তায় জানতে হয়।

  • ওয়েব সাইটের আর্টিকেলগুলো একদম ইউনিক হতে হবে। কোন প্রকার কপি কন্টেন্ট Google AdSense গ্রহন করে না।
  • কোন প্রকার Adult বা অশ্লীল কন্টেন্ট রাখা যাবে না।
  • ওয়েব সাইটে কমপক্ষে ৩০ টির উপরে হাই কোয়ালিটি আর্টিকেল থাকতে হবে।
  • ওয়েব সাইটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেজ রাখতে হবে যেমন, About us, Contact us ও Terms & condition, privacy policy, disclaimer ইত্যাদি পেইজ গুলো থাকতে হবে।
  • বর্তমান আপডেট অনুসারে Google AdSense বাংলা সাইট গ্রহন করে। তাই আপনি চাইলেই বাংলা কন্টেন্ট নিয়েও কাজ করতে পারবেন।
  • সাইটে এমন কোনো বিষয় প্রকাশ করা যাবে না যেগুলো অন্য কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে যেমন, উস্কানিমূলক পোস্ট।
আপাদত এই বিষয়গুলো শুরুর দিকে লক্ষ রাখলেই খুব সহজেই গুগল অ্যাডসেন্স পেয়ে যাবেন আপনি। তবে যদি ওয়েবসাইট এ কিছু অরগানিক ভিজিটর থাকে তাহলে অ্যাডসেন্স দ্রুত পেতে অনেক সহায়তা করবে আপনাকে।

কিভাবে এডসেন্স একাউন্টের জন্য আবেদন করবেন?

গুগল এডসেন্স একাউন্টের জন্য আবেদন করা খুবই সহজ। একটি ওয়েব সাইট যদি এডসেন্স পাওয়ার মত হয়, তবে আবেদন করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এপ্রুভাল পাওয়া যাবে। যাইহোক, কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করে আমরা আজকে গুগল এডসেন্স একাউন্ট খুলবো।
প্রথম ধাপঃ আবেদন করার জন্য প্রথমে Google AdSense একাউন্টের হোম পেজে যেতে হবে। এর পর উপরে সাইন-আপ বাটন দেখা যাবে সেখানে ক্লিক করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ সাইন আপ বাটনে ক্লিক করার পর আপনাকে জিমেইল একাউন্ট দিয়ে লগিন করতে বলা হবে। আপনি যেই জিমেইল দিয়ে গুগল অ্যাডসেন্স খুলতে চান সেই জিমেইলটি দিয়ে এখন লগিন করুন।
তৃতীয় ধাপঃ ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করার পর এখন আপনার ওয়েবসাইট দিতে বলা হবে। ওয়েব সাইট যুক্ত করে নিচে Continue তে ক্লিক করলে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য পূরণ করার একটি ফরম চলে আসবে। সেখানে আপনার সকল তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। কোনো ভুল তথ্য দেয়া যাবে না কোনোভাবেই। এবং সবশেষে সকল তথ্য পূরণ করার পর Submit বাটনে ক্লিক করলে যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এপ্রুভার মেইল পেয়ে যাবেন।

অ্যাডসেন্স একাউন্ট ব্যবহারের নিয়মাবলীঃ

ধরে নিলাম, আপনি এপ্প্রভাল পেয়ে গেলেন। আপনার জন্য একটি গুগল অ্যাডসেন্স একাউন্ট তৈরি হয়ে গেলো। কিন্তু কাজ কী এখানেই শেষ হয়ে গেছে? একেবারেই নয়। একটি গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়া থেকে এর রক্ষা করাটা সবথেকে বেশি কঠিন। কিছু বিষয় না জানা থাকলে যেকোনো সময় এডসেন্স একাউন্ট হারাতে হবে। তাই নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো যেগুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে।
  • কখনোই নিজের সাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবেন না।
  • কাউকে আপনার সাইটের লিংক ও দেয়া যাবে না। এক আইপি থেকে অতিরিক্ত ক্লিক আসলে গুগল সেটাকে ধরতে পারে।
  • এডসেন্স একাউন্ট পাওয়ার পর কোন এডাল্ট এড স্থাপন করা যাবে না।
  • এক’ই কম্পিউটার থেকে দুইটি এডসেন্স একাউন্ট খোলা যাবে না। এমনকি দুইটা এডসেন্স একাউন্টে লগ-ইন করাও যাবে না। যদি কখনো করা হয় তাহলে দুটি একাউন্টই ডিজেবল করে দিবে
  • আপনার একাউন্টে অন্য কারো কম্পিউটারে লগ-ইন করবেন না। বারে বারে আইপি পরিবর্তন করে সাইন-ইন করলে, একাউন্ট ব্যান হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আপাদত এই বিষয়গুলো মেনে কাজ করলে আপনি একদম নিরাপদ থাকবেন। এবং গুগল অ্যাডসেন্স এর সাথে অনেকদিন ধরে কাজ করতে পারবেন কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই।

এছাড়াও আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস, ইউটিউবিং, টেকনোলজি বিভিন্ন টিপ্স এন্ড ট্রিক্স, ডিজিটাল স্কিল শিখতে চান তাহলে আমার ইউটিউব চ্যানেল আজই সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন। কারন আমি প্রতিনিয়ত ডিজিটাল স্কিল বিষয়ক টিউটোরিয়াল পাবলিশ করে যাচ্ছি আমার চ্যানেলে।

Shahab Uddin Chowdhury

I am Sajid Imon, Professional Web Designer and WordPress developer.

Don`t copy text!