২০২২ সালের বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনগুলো
অনেকেই জানতে চান বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি? আমি কি সেই ব্যবসা করে লাভবান হতে পারবো নাকি লসের মুখ দেখতে হবে? এইরকম হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় একজন নতুন উদ্যোগটার। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুজে না পেয়ে অনেকে ভয়ে আগেই পিছিয়ে যায়।
তাই আজকের এই পর্বে আমি এমন কিছু ব্যবসার আইডিয়া তুলে ধরবো যেগুলো বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এবং সাথে এগুলোতে রিস্ক বা ঝুকিও অনেক কম।
চলুন তাহলে শুরু করা যাক,
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি?
ব্যবসা করার মতো বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা অনেক রয়েছে। তবে এমন কিছু ব্যবসা রয়েছে যেগুলো করার জন্য আপনার বেশি পুজির প্রয়োজন হবে না। কম পুজিতেই আপনি এই ব্যবসাগুলো শুরু করে দিতে পারবেন। শুধু প্রয়োজন ধৈর্য, পরিশ্রম।
আরো পড়ুনঃ
যাইহোক, আজকের এই পর্বে আমরা জানবো বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা কোনটি? যেগুলো করার জন্য বেশি পুজির প্রয়োজন হবে না। কিন্তু লাভের পরিমান অন্যসব ব্যবসা থেকে অনেক বেশি হবে। তো চলুন শুরু করা যাক,
১। ইকমার্স ব্যবসা
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার মধ্যে ইকমার্স ব্যবসাটি অনেক জনপ্রিয়। কারন এখন প্রায় ৯০% মানুষ যেকোনো কিছু কেনার পূর্বে প্রথমেই ইন্টারনেটে সেই জিনিস সম্পর্কে জেনে নেয়। এরপর যদি মনে করে জিনিসটি ভালো হবে তাহলে অনলাইনেই অর্ডার করে।
আর তাই আস্তে আস্তে ইকমার্স বিজনেসটি দিন দিন জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে উঠতেছে। আপনার যদি কোনো প্রোডাক্ট থাকে তাহলে আপনিও ইকমার্স বিজনেস শুরু করে দিতে পারেন।
একটি ইকমার্স বিজনেস শুরু করার জন্য ৩টি জিনিসের প্রয়োজন হবেঃ
- ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভার
- একটি প্রফেশনাল ইকমার্স ওয়েবসাইট
- আপনার প্রোডাক্ট এবং কাস্টোমারস
আপনি যদি ডোমেইন হোস্টিং সম্পর্কে না জানেন তাহলে এই ওয়েবসাইটে একটি আর্টিকেল পাবলিশ হয়েছে যেখানে ডোমেইন, হোস্টিং, ওয়েবসাইট ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি দেখে নিতে পারেন।
পড়তে পারেনঃ
যাইহোক, যদি ধৈর্য এবং পরিশ্রম দিয়ে একটি ইকমার্স বিজনেস দাড় করাতে পারেন তাহলে শুধু লাভ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবেন না।
২। সার্ভিসিং করার ব্যবসা
সার্ভিসিং ব্যবসা বলতে এখানে মোবাইল/কম্পিউটার/বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স জিনিস সার্ভিসিং বোঝানো হয়েছে। আপনি যদি এগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি জিনিসে এক্সপার্ট হয়ে থাকেন তাহলে এই সার্ভিসিং ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারেন।
যদি মোবাইল সার্ভিসিং সম্পর্কে ভালো জানেন তাহলে একটি দোকান নিতে পারেন। পরবর্তীতে মোবাইল সম্পর্কিত বিভিন্ন পার্টস বিক্রি করতে পারেন।
তথ্য প্রযুক্তির এক যুগে প্রায় সব মানুষের কাছে একটি করে মোবাইল/স্মার্টফোন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই মোবাইল ফোনটি নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাটারি, মোবাইলের স্ক্রিন, চারজার ইত্যাদিতে সমস্যা দেখা দেয়।
এগুলো ঠিক করার জন্য আপনার কোনো পুঁজি লাগবে না। যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মোবাইল সার্ভিসিং এর উপর ট্রেনিং নিয়ে আপনি এই ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারবেন।
৩। ব্লগিং/কন্টেন্ট রাইটিং ব্যবসা
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার মধ্যে অন্যতম একটি ব্যবসা হচ্ছে ব্লগিং/কন্টেন্ট রাইটিং বিজনেস। তবে এটা সচারচর অন্যসব লোকাল ব্যবসা থেকে আলাদা। এই ব্লগিং/কন্টেন্ট রাইটিং ব্যবসা হচ্ছে অনলাইন ব্যবসার সাথে যুক্ত।
অনলাইনে একটি ওয়েবসাইট খুলে সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করাকেই ইন্টারনেটের ভাষায় ব্লগিং বলা হয়। আপনার যদি লেখালেখি ভালো লাগে তাহলে এই ব্লগিং ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
যখন ওয়েবসাইটে আপনার সেই লেখাগুলো মানুষ গুগল সার্চ করে পড়তে আসবে তখন সেই ভিজিটরদের এড দেখিয়ে ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করা যাবে।
এছাড়াও স্পন্সরশীপ, প্রোডাক্ট সেলিং, এফিলিয়েশন ইত্যাদি বিভিন্ন উপায় রয়েছে ব্লগিং ব্যবসা থেকে আয় করার।
৪। ইউটিউব ব্যবসা
বর্তমানে সবথেকে বড় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হচ্ছে ইউটিউব। Statista এর মতে প্রতি মিনিটে ৫০০ ঘণ্টা ভিডিও আপলোড হয় এই ইউটিউবে। যেটা প্রতি ঘণ্টায় দাড়ায় ৩০ হাজারে।
পূর্বে ইউটিউব থেকে কোনোরকমের টাকা ইনকাম করার সুযোগ ছিলো না। মানুষ শুধু ইউটিউবে যেতো আর নিজের প্রয়োজন মতো ভিডিও দেখতো।
কিন্তু বর্তমানে ইউটিউব সবাইকে টাকা ইনকাম করার সুযোগ করে দিয়েছে। আপনি যেকোনো বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করে দিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
তবে এখানে ইউটিউব কিছু নিয়মনীতি নির্ধারণ করে দিছে। আপনি যদি সেই নিয়মনীতিগুলো ভঙ্গ করেন তাহলে চাইলেও ইউটিউবের সাথে কাজ করতে পারবেন না।
ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য কিছু নিয়মনীতি নিচে তুলে ধরলামঃ
- একটি প্রফেশনাল ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করতে হবে
- চ্যানেলে নিয়মিত ভিডিও পাবলিশ করতে হবে
- কোনো ধরনের কপিরাইট ভিডিও বা অন্য কারো ভিডিও নিজের বলে চালিয়ে দেয়া যাবে না
- ভিডিওতে কপিরাইট ফ্রি ইমেজ, মিউজিক, ভিডিও সিন ব্যবহার করতে হবে
- ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজ করার জন্য গত ১ বছরের মধ্যে ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং সাথে ৪ হাজার ওয়াচটাইম লাগবে
আরো পড়ুনঃ
প্রাথমিকভাবে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখলেই যেকেউ ইউটিউব থেকে মাসে লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবে।
আপনি যদি নিজে কোনো বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে থাকেন এবং চাচ্ছেন অন্য কাউকে শেখাতে তাহলে ইউটিউবের সাথে কাজ করতে পারেন। ইউটিউবকে ফুল টাইম বিজনেস হিসেবে নিলে মাসে লাখ টাকা ইনকাম করা কঠিন কিছু না।
৫। ফ্রেশ ফলমূলের ব্যবসা
বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ফলমূলেই ফর্মালিন দেয়া থাকে। খাটি এবং ফর্মালিন মুক্ত ফলমূল পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। আর এই কারনেই ফ্রেশ ফলমূলের ব্যবসার এতো চাহিদা।
নিজে বাগান করে বা যারা ফলমূলের বাগান করে তাদের কাছ থেকে প্রাইকারি কিনে তারপর সেগুলো আপনি খুচরা পাড়া বা মহল্লায় বিক্রি করতে পারেন।
এছাড়াও অনলাইনে ডিলার রেখেও ফ্রেশ ফলমূল বিক্রি করা যায়। সবাই ভেজালমুক্ত ফলমূল খেতে চায় কিন্তু প্রায় ৯০% ফলমূলেই আজকাল ফর্মালিন থাকে।
তাই আপনি যদি এই ফ্রেশ ফলমূলের ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন তাহলে অনেক লাভবান হবেন।
৬। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা
বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসাটি অনেক লাভজনক একটি ব্যবসা। কারন প্রায় প্রত্যেকটি মানুষ এই মোবাইল ব্যাংকিং এর সাথে যুক্ত।
এখন কাউকে টাকা দেয়ার জন্য বা মার্কেট থেকে কেনাকাটা করার জন্য বাহিরে যেতে হয় না। হাতে থাকা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেই এখন সবকিছু করা যায়।
বিকাশ, রকেট, নগদ সহ প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাংকের মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে যাতে গ্রাহকরা খুব সহজেই এখন মোবাইল থেকেই সব ধরনের আর্থিক লেনদেন করতে পারে।
এছাড়াও এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য বেশি পুজির প্রয়োজন হয় না। আপনার এই মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে এবং এরপর তাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে হবে যেমন, বিকাশ এজেন্ট, রকেট এজেন্ট, নগদ এজেন্ট ইত্যাদি।
গ্রামাঞ্চলে এই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসাটি সবথেকে বেশি চলে।
৭। হাঁস/মুরগীর ব্যবসা
নিজেই নিজের কর্ম তৈরি করাকে আত্মকর্মসংস্থান বলা হয়। আর এই আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করার অন্যতম একটি ব্যবসা হচ্ছে হাঁস/মুরগীর ব্যবসা।
গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার মধ্যে এটিই অন্যতম।
কৃষি ইন্সিটিউট থেকে এই ব্যবসা করার জন্য আজকাল অনেক বেকার যুবক ট্রেনিং নিচ্ছে। তারপর নিজের জমিতে অথবা অন্য কারো খামার লিজ নিয়ে একটি মুরগীর খামার গড়ে তুলছে।
আর হাসের খামার করার জন্য প্রয়োজন একটি পুকুর যেটা গ্রামাঞ্চলে প্রায় সব বাড়িতেই দেখা যায়। ছোট্ট একটি পুকুর লিজ নিয়েও হাসের খামার তৈরি করা যাবে।
প্রথমদিকে এতো বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই। যখন আস্তে আস্তে ব্যবসা থেকে মুনাফা আসবে তখন খামারের পরিধি বাড়ানো যাবে।
শুরুরদিকে নিজেই ব্যবসাটি পুরোটা পরিচালনা করতে পারেন। পরবর্তীতে যখন খামারের আয়তন বাড়বে এবং সাথে কাজের চাপও বাড়বে তখন শ্রমিক নেয়া যেতে পারে।
৮। কম্পিউটার ট্রেনিং ব্যবসা
তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে প্রায় সব ধরনের সেক্টরেই আজকাল কম্পিউটার জানা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। এখন যেকোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও কম্পিউটার নিয়ে নানান প্রশ্ন আসে। তাই বর্তমানে সবাইকে এই কম্পিউটার শিখতে হয়।
আপনি যদি নিজে কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো জানেন। কম্পিউটারের কোথায় কি করতে হয়, ফোল্ডার, ফাইল, ইত্যাদি সম্পর্কে যদি আপনার অনেক ধারনা থাকে তাহলে এটাকেই ব্যবসা হিসেবে নিতে পারেন।
একটি কম্পিউটারের দোকান দিয়ে সেখানে সবাইকে কম্পিউটার শেখাতে পারেন। এবং শেখানো বাবদ তাদের কাছ থেকে ফি নিতে পারেন।
এমন অনেকেই আছে যারা নতুন নতুন কম্পিউটার কিনেছে কিন্তু কিভাবে কি করতে হবে সেটা জানে না। তাদের আপনি ট্রেনিং দিতে পারেন।
একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার দিয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারেন। প্রথমদিকে ৩/৪টি কম্পিউটার হলেই এই ব্যবসা শুরু করা যাবে। পরবর্তীতে যখন শিক্ষার্থী বেড়ে যাবে তখন একটি বা দুইটি নতুন কম্পিউটার কেনা যেতে পারে।
তো এই ছিলো, ৮টি জনপ্রিয় এবং বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা যেগুলোর যেকোনো একটি ব্যবসা আপনি শুরু করে দিতে পারেন।
এখানে কিছু ব্যবসা এমন আছে যেগুলো করার জন্য আপনার কোনো টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না যেমন, ইউটিউব ব্যবসা, ব্লগিং ব্যবসা, ইকমার্স বিজনেস।
আবার কিছু ব্যবসা এমন আছে যেগুলো করার জন্য কিছু টাকা পুঁজি হিসেবে বিনিয়োগ করা লাগবে যেমন, সার্ভিসিং ব্যবসা, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা, কম্পিউটার ট্রেনিং ব্যবসা ইত্যাদি।
যেটাই শুরু করুন না কেন অবশ্যই ধৈর্য এবং পরিশ্রম দিয়ে করতে হবে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি উত্তর দেয়া চেষ্টা করবো।
এছাড়াও আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস, ইউটিউবিং, টেকনোলজি বিভিন্ন টিপ্স এন্ড ট্রিক্স, ডিজিটাল স্কিল শিখতে চান তাহলে আমার ইউটিউব চ্যানেল আজই সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন। কারন আমি প্রতিনিয়ত ডিজিটাল স্কিল বিষয়ক টিউটোরিয়াল পাবলিশ করে যাচ্ছি আমার চ্যানেলে।