ওয়েবসাইট কি? ওয়েবসাইট এর কাজ কি ? ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করব
ইন্টারনেট সৃষ্টির শুরু থেকেই একটি শব্দ চালু হয়েছে সেটি হচ্ছে “ওয়েবসাইট“। আজকের এই পর্বে আমরা এই ওয়েবসাইট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ওয়েবসাইট কি, কত প্রকার, ওয়েবসাইট এর কাজ কি, নতুন ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করতে হয়, ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা এবং সাথে অসুবিধা কি কি সবকিছু আপনি জানতে পারবেন আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। তো চলুন শুরু করা যাক,
ওয়েবসাইট কি বা ওয়েবসাইট বলতে কি বোঝায়
প্রথমেই আমরা জানবো ওয়েবসাইট কি বা ওয়েবসাইট কত প্রকার? ওয়েবসাইট বা সংক্ষেপে সাইট হচ্ছে কতগুলো ইমেজ, টেক্সট, গ্রাফিক্স, ভিডিও, অডিও ইত্তাদির একটি সম্মিলিত পেজ বা পৃষ্ঠা। এই পেজগুলো পুরোপুরি ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে থাকে যার কারনে এদেরকে ওয়েব সাইট বা ওয়েব পেজ বলা হয়। এটি একটি এইচটিএমএল ডকুমেন্ট যেটা যা এইচটিটিপি প্রোটোকল দ্বারা সার্ভার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওয়েব ব্রাউজারে স্থানান্তরিত হয়। একটি ওয়েবসাইটকে ইন্টারনেটে লাইভ বা সরাসরি দেখানোর জন্য দুটি জিনিসের প্রয়োজন হয়। একটি হচ্ছে ডোমেইন এবং অন্যটি হচ্ছে সার্ভার।
ডোমেইন হচ্ছে ওয়েবসাইট এর নাম যেটার মাধ্যমে ইন্টারনেটে সেই ওয়েবসাইটটি পরিচিতি লাভ করবে। আর অন্যদিকে সার্ভার হচ্ছে একটি স্থান বা জায়গা যেখানে পুরো ওয়েবসাইট কে হোস্ট করা হয় বা রাখা হয়। আর যে ওয়েবসাইট তৈরি করে তাকে ওয়েব ডেভেলপার বলা হয়।
ওয়েবসাইট এর প্রকারভেদ বা কত প্রকার?
পুরো ইন্টারনেট এ আপনি যত ওয়েবসাইট দেখতে পান সেগুলো সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট
- ডায়নামিক ওয়েবসাইট
স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটঃ স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট এর ডিজাইন অংশ। যেই অংশটা ভিজিটররা দেখতে পায় কিন্তু সেই ওয়েবসাইট এর কোনো কিছুই কাজ করবে না এবং কোনোকিছু চাইলেই যেকেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। যদি পরিবর্তন করতেই হয় তাহলে অবশ্যই কোডিং জ্ঞান থাকা লাগবে। এই ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য কিছু ভাষা জানতে হবে। আর যারা এই ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করে তাদেরকে বলা হয় ওয়েব ডিজাইনার।
ডায়নামিক ওয়েবসাইটঃ ডায়নামিক ওয়েবসাইট হচ্ছে যেই ওয়েবসাইটগুলো পুরোপুরি কার্যকরী। এটার একটি এডমিন প্যানেল থাকে যেখান থেকে সবকিছু পরিবর্তন করা যায়। কোনো প্রোগ্রামিং জ্ঞান জানা লাগে না। যেকেউ ওয়েবসাইটে ভিজিট করে এক পেজ থেকে আরেক পেজে যেতে পারে। পুরো ইন্টারনেটে যত ওয়েবসাইট রয়েছে তার ৯০% হচ্ছে ডায়নামিক ওয়েবসাইট আর বাকি ১০% হচ্ছে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট। যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, স্কিলগড়ি ইত্যাদি।
এছাড়াও ইন্টারনেটে আরো ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো ক্যাটাগরি ভিত্তিক আলাদা করা হয়েছে যেমন নিজের জন্য পার্সোনাল বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজনেস বা কর্পোরেট ওয়েবসাইট, খবর প্রকাশের জন্য ম্যাগাজিন বা নিউজপেপার ওয়েবসাইট, যোগাযোগের জন্য সামাজিক মাধ্যম ওয়েবসাইট সহ আরো অনেক ধরনের ওয়েবসাইট রয়েছে ইন্টারনেটে।
ওয়েবসাইট এর কাজ কি
ব্যক্তিগত ব্যবহার বা প্রাতিষ্ঠানিক দুই ক্ষেত্রেই একটি ওয়েবসাইট থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। একটি ওয়েবসাইট আপনাকে বা আপনার প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। বর্তমান এই যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। দিন যত যাচ্ছে মানুষ তত অনলাইন বা ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে উঠছে। আর এই সময়ে অন্যদের থেকে একদাপ এগিয়ে থাকার জন্য অবশ্যই একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।
যেমন ধরুন, আপনার একটি ব্যবসা রয়েছে যেখানে আপনি কাপড় বিক্রি করেন। এখন আপনার কি করতে হবে প্রথমে? কাপড় বিক্রি করার জন্য একটি দোকান বা শোরুম নিতে হবে। কাস্টমাররা আসবে আপনার দোকানে আর তাদের জন্য পছন্দের কাপড় কিনবে। কিন্তু এখানে কাস্টমার কারা আসবে? যারা আপনার দোকান চিনে বা যারা ওই জায়গাটা চিনে তারাই তো আসবে। তাহলে কিন্তু এখানে কাস্টমারদের একটি সীমাবদ্ধতা থাকে। কিন্তু আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে পুরো বিশ্বের মানুষ আপনার কাস্টমার হয়ে যাবে কারন ওয়েবসাইটটি তো ইন্টারনেটের মধ্যে বিদ্ধমান রয়েছে। আর আপনার ব্যবসার বেচাকেনাও দিগুন বেড়ে যাবে।
নতুন ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করতে হয়
বর্তমানে অনেকের মাঝে একটি কমন প্রশ্ন শুনতে পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে “ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করব”। আপনিও যদি এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ুন।
একটি ওয়েবসাইট দুইভাবে তৈরি করা যায়।
- কোডিং বা প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে
- ওয়েবসাইট বিল্ডার সফটওয়্যার ব্যবহার করে
কোডিং বা প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হলে তাকে কাস্টম ওয়েবসাইট বলে। বড় বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য কাস্টম ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে। কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা নিচে দেয়া হলো যেগুলো ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়ঃ
- PHP
- RUBY
- PYTHON
- JAVASCRIPT
- JAVA
- C++
বর্তমানে এই প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য। তবে সবগুলো ভাষা ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না। যেকোনো একটি বা দুইটি ভাষা ব্যবহার করা হয় পুরো কাস্টম ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য।
অন্যদিকে ওয়েবসাইট বিল্ডার সফটওয়্যার দিয়েও আজকাল ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় যেগুলোকে বলা হয় সিএমএস ভিত্তিক ওয়েবসাইট। এই ধরনের ওয়েবসাইটগুলো তৈরি করার জন্য তেমন প্রোগ্রামিং ভাষা জানার বা শেখার প্রয়োজন হয় না। সফটওয়্যারগুলোর রেডিমেট কিছু ডিজাইন দেয়া থাকে যেগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে মাত্র এক ক্লিকেই ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলা যায়। এই ওয়েবসাইটগুলো যেকেউ চাইলেই খুব সহজেই ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের আলাদাভাবে কোনো প্রোগ্রামার বা কোডার নিয়োগ দেয়া লাগবে না। কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট বিল্ডার সফটওয়্যারগুলো নিচে দেয়া হলোঃ
- WORDPRESS
- JOOMLA
- OPENCART
- SHOPIFY
- WIX
- WEEBLY
- MAGENTO
- LARAVEL
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করেও ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। আপনি ইন্টারনেটে একটু সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।
সবগুলো দিয়েই ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় তবে সবথেকে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যার হচ্ছে ওয়ার্ডপ্রেস। কারন এই ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে পুরো পৃথিবীর প্রায় ৩৫% ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই সফটওয়্যারটির কত চাহিদা। ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা অনেক সহজ যদি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ভালোভাবে শিখতে পারেন। কিভাবে একটি ওয়েবসাইট সফটওয়্যার দিয়ে তৈরি করতে হয় সেটা একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে নিচের ভিডিওটি দেখলে বুঝতে পারবেন।
ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা -অসুবিধা কি কি
একটি ওয়েবসাইট আপনাকে এবং আপনার ব্যবসা দুটোকেই সবার থেকে আলাদা করে তুলবে। তাই একটি ওয়েবসাইট থাকাটা বর্তমান যুগে অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। এছাড়াও আরো অনেক সুবিধা রয়েছে ওয়েবসাইট থাকার এবং সাথে কিছু অসুবিধা রয়েছে। সবগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
সুবিধাসমূহঃ
- নিজের ব্যবসায়িক কাজগুলোকে অনেক সহজ এবং দ্রুত করা যায়
- নিজের বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খুব সহজেই সবাই জানতে পারে
- ওয়েবসাইটে নিজের বা কোম্পানির ছবি, লেখা, ভিডিও, অডিও প্রকাশ করা যায়
- দেশ বিদেশের মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যায়
- ওয়েবসাইটকে আয় রোজগার করার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করা যায়
অসুবিধাসমূহঃ
- মাঝেমধ্যে ওয়েবসাইট ডাউন থাকলে ভিজিটরদের সমস্যা হতে পারে
- ওয়েবসাইটে স্প্যামিং হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে
- ওয়েবসাইট হ্যাক হলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে একটি ওয়েবসাইট থাকলে। তাই আপনি যদি অনলাইনে নিজেকে প্রতিস্থা করতে চান অথবা নিজের বিজনেসকে অনলাইনে নিতে চান তাহলে এখনই একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করে ফেলুন।
যাইহোক, এই ছিলো ওয়েবসাইট কি, কত প্রকার, ওয়েবসাইট এর কাজ কি, নতুন ওয়েবসাইট কিভাবে তৈরি করতে হয়, ওয়েবসাইট থাকার সুবিধা এবং সাথে অসুবিধা কি কি সবকিছু নিয়ে একটি পরিপূর্ণ আর্টিকেল। আশা করি এখন ওয়েবসাইট নিয়ে আপনার আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। তবুও যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
এছাড়াও আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস, ইউটিউবিং, টেকনোলজি বিভিন্ন টিপ্স এন্ড ট্রিক্স, ডিজিটাল স্কিল শিখতে চান তাহলে আমার ইউটিউব চ্যানেল আজই সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন। কারন আমি প্রতিনিয়ত ডিজিটাল স্কিল বিষয়ক টিউটোরিয়াল পাবলিশ করে যাচ্ছি আমার চ্যানেলে।