কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করব? অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম
বর্তমান এই ইন্টারনেটের যুগে এখন অফলাইন ব্যবসার পাশাপাশি নানান অনলাইন ভিত্তিক অনেক ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। যেকোনো কোম্পানি এখন আর লোকাল মার্কেটের উপর নির্ভর করে থাকে না। অনেক নতুন কোম্পানি তৈরি হচ্ছে যারা নিজেদের ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করার জন্য অনলাইনে ব্যবসা করার কথা ভাবছে। কিন্তু শুরুর দিকে একজন নতুন উদ্যোক্তার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় যেমন, কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করব, অনলাইন ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি, কোন ব্যবসাটি অনলাইনে করলে ভালো হবে, অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম কি ইত্যাদি। আর এই কারনেই অনেকে অনলাইন ব্যবসা করা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
আপনারও যদি এই বিষয়গুলো জানার প্রয়োজন হয় তাহলে আজকের এই পর্বটি আপনার জন্য। কারন আজকের এই পর্বে আমি আপনাকে অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম, কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করব ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই বুঝিয়ে দিবো। তো চলুন শুরু করা যাক,
অনলাইন ব্যবসার প্রকারভেদ বা অনলাইন ব্যবসার নামঃ
কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করব এই বিষয়টি জানার পূর্বে চলুন জেনে নেই অনলাইনে কয় ধরনের ব্যবসা করা যায় বা কিছু অনলাইন ব্যবসার নাম যেগুলো সবচেয়ে চাহিদাবহুল। প্রায় সব ধরনের ব্যবসাই অনলাইনে করা যায়। আপনার যদি একটি কোম্পানি থাকে এবং সেই কোম্পানির কিছু প্রোডাক্ট থাকে তাহলে সেই প্রোডাক্ট আপনি অনলাইনে বিক্রি করতে পারবেন। অনলাইনে সাধারণত দুই ধরনের ব্যবসা করা যায়।
- অনলাইনে লোকাল পণ্যের ব্যবসা
- অনলাইনে ডিজিটাল পণ্যের ব্যবসা
অনলাইনে লোকাল পণ্যের ব্যবসা বলতে লোকাল মার্কেটে যেই পণ্যগুলো বিক্রি করা হয়, যেগুলো কাস্টমার উপস্থিত হয়ে ক্রয় করে তাকে বুঝায়। যেমন অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা, টিশার্ট ব্যবসা, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, ফাস্ট ফুড ব্যবসা, ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা, ফ্রেশ ফলের ব্যবসা, ডিলারশিপ ব্যবসা ইত্যাদি। অন্যদিকে অনলাইনে ডিজিটাল পণ্যের ব্যবসা বলতে এখানে অনলাইনে ডিজিটাল পণ্য কেনা বেচাকে বুঝায় যেগুলো অনলাইনে অনেক চাহিদা এবং জনপ্রিয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু ব্যবসা হচ্ছে অনলাইন কোর্স, সফটওয়্যার ব্যবসা, ডিজিটাল এজেন্সি ব্যবসা ইত্যাদি।
কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করব? অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়মঃ
এখন চলুন জেনে নেয়া যাক অনলাইন ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি বা অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা হওয়ার কারনে প্রায় এখন সব ধরনের ব্যবসাই অনলাইনে করা যাচ্ছে। যেকেউ এখন খুব সহজেই অনলাইনে বিজনেস করতে পারছে। এখানে শুরু করার জন্য কোনো লাইসেন্স এর প্রয়োজন হয় না তবে এখানে ট্যাক্স দিতে হয় এতটুকুই।
অনলাইনে ব্যবসা করার দুটি উপায় বা পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে পুঁজি ছাড়া মানে যেই ব্যবসা করার জন্য কোনো ধরনের টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। অন্যটি হচ্ছে পুঁজি বা বিনিয়োগ করে ব্যবসা শুরু করা।
পুঁজি ছাড়া অনলাইন ব্যবসা করার মতো এখন অনেক বিজনেস রয়েছে যেমন রাইড শেয়ারিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি। এগুলো করার জন্য আলাদা কোনো পুজির প্রয়োজন হয় না। পুঁজি ছাড়াই এই বিজনেস শুরু করা যায়। তবে এই ব্যবসাগুলো করার জন্য আপনার স্কিল, ধৈর্য এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন হবে।
আরো পড়ুনঃ
- ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কিভাবে এটা করে অনলাইন থেকে ইনকাম করতে হয়
- এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে ফ্রিলান্সিং করা যায়
- ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট কিভাবে ফ্রিতে শেখা যায়
- ওয়েবসাইট তৈরি করে কিভাবে ইনকাম করতে হয়
যাইহোক, অনলাইনে ব্যবসা করার জন্য আপনার একটি প্রফেশনাল ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার প্রয়োজন হবে যেখানে আপনার কোম্পানির যত প্রোডাক্ট আছে সব আপলোড করে রাখতে হবে যাতে গুগলে কেউ সার্চ দিলে খুজে পায় এবং খুব সহজেই ওয়েবসাইট থেকেই নিজেদের পছন্দের জিনিসপত্র কিনতে পারে। এছাড়াও আপনি একটি ইকমার্স মোবাইল এপ্লিকেশন দিয়েও অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অথবা যদি ব্যবসার পরিধি অনেক বড় হয় তাহলে ওয়েবসাইট এবং এপ্লিকেশন দুটি দিয়েই শুরু করতে পারেন। আশা করি এখন কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করব এই প্রশ্নটির উত্তর পেয়ে গেছেন।
ফেসবুকে ব্যবসা করার নিয়ম
অনলাইন ব্যবসা করার আরো একটি সেক্টর হচ্ছে ফেসবুক। কয়েকবছর আগেও ফেসবুক শুধু যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন ফেসবুকের মাধ্যমেও নিজের ব্যবসা শুর করা যায়। ছোট উদ্যোক্তারা যাদের ব্যবসার সাইজ অনেক ছোট, পুঁজি অনেক কম তারা খুব সহজেই ফেসবুককে ব্যবহার করে নিজের একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে। ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করাকে বলা হয় এফ কমার্স।
ফেসবুকে ব্যবসা করার জন্য তিনটি জিনিস আপনার প্রয়োজন হবেঃ
- প্রফেশনাল ফেসবুক বিজনেস পেজ
- ডিজিটাল বা লোকাল প্রোডাক্ট
- ফেসবুক মার্কেটিং ( বুস্টিং, প্রমোশন )
ফেসবুক বিজনেস পেজঃ ফেসবুকে ব্যবসা করার জন্য শুধু একটি ফেসবুক পার্সোনাল একাউন্ট থাকলেই হবে না সাথে একটি বিজনেস পেজ খুলতে হবে যেখানে আপনার প্রোডাক্টগুলো প্রমোট করবেন। তাই প্রথমেই ভালো মতো অপ্তিমাইজ করে একটি প্রফেশনাল ফেসবুক বিজনেস পেজ খুলতে হবে আপনাকে। আপনি যদি নিজে পারেন তাহলে ভালো, আর যদি না পারেন তাহলে অবশ্যই একজন ডিজিটাল মার্কেটারের সহায়তা নিতে হবে যে কিনা আপনার হয়ে বিজনেস পেজটি একদম প্রফেশনালভাবে তৈরি করে দিবে।
ডিজিটাল বা লোকাল প্রোডাক্টঃ একটি প্রফেশনাল ফেসবুক বিজনেস পেজ খুলার পর এখন আপনার প্রোডাক্ট আপলোড বা লিস্টিং করার প্রয়োজন হবে। ডিজিটাল বা লোকাল যেকোনো প্রোডাক্ট আপনি পেজের মাধ্যমে সেল করতে পারবেন। ডিজিটাল প্রোডাক্ট যেমন বই, সফটওয়্যার, ভিডিও কোর্স ইত্যাদি। আর অন্যদিকে লোকাল বা ফিজিকাল প্রোডাক্ট যেমন ইলেকট্রনিক্স পণ্য, টিশার্ট, কাপড়ের পণ্য ইত্যাদি।
ফেসবুক মার্কেটিং ( বুস্টিং, প্রমোশন )ঃ ফেসবুকে ব্যবসা করার জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন হবে ফেসবুক মার্কেটিং। কারন যখন একটি পেজ খুলা হবে তখন সেই পেজটি একদম নতুন অবস্তায় থাকবে। কেউ আপনার পেজ সম্পর্কে জানবে না। আর যেহেতু পেজটি নতুন তাই কোনো কাস্টমার আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কেও জানতে পারবে না। আর এই কারনেই ফেসবুক মার্কেটিং অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
একটি কথা মনে রাখবেন “পণ্য যত ভালোই হোক না কেন, কাস্টমার যদি নাই জানে তাহলে সেই পণ্য বিক্রি হবে না”। তাই বড় বড় কোম্পানি তাদের পণ্য কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বিজ্ঞাপনের উপর অনেক বিনিয়োগ করে থাকে।
ফেসবুক মার্কেটিং বলতে এখানে প্রোডাক্ট বুস্টিং, পেজ প্রমোশন ইত্যাদিকে বোঝাচ্ছে। আর এই মার্কেটিং করার জন্য আপনার একটি মাস্টার কার্ড/ ভিসা কার্ড লাগবে যেটাতে ডলার সাপোর্ট করে। তাহলেই আপনি ফেসবুকে বুস্ট বা প্রমোশন করতে পারবেন।
এখন অনেক ব্যাংক আছে যারা ডুয়াল কারেন্সি কার্ড দেয় তাদের গ্রাহকদের যেমন, ইবিএল ব্যাংক। তাদের একটি ডুয়াল কারেন্সি মাস্টার কার্ড আছে। আপনি চাইলে সেটা ব্যবহার করতে পারেন। তবে কার্ডটি নেয়ার জন্য আপনার অবশ্যই পাসপোর্ট এবং ভোটার আইডি কার্ড লাগবে।
যাইহোক, আশা করছি এখন বুঝতে পারছেন কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করবেন, অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম এবং ফেসবুকে ব্যবসা করার নিয়ম। এখন আপনি নিজেই ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করে দিতে পারবেন। এছাড়াও আপনি যদি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চান তাহলে ওয়েবসাইটে একটি আর্টিকেল রয়েছে সেটি পড়তে পারেন। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
এছাড়াও আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস, ইউটিউবিং, টেকনোলজি বিভিন্ন টিপ্স এন্ড ট্রিক্স, ডিজিটাল স্কিল শিখতে চান তাহলে আমার ইউটিউব চ্যানেল আজই সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন। কারন আমি প্রতিনিয়ত ডিজিটাল স্কিল বিষয়ক টিউটোরিয়াল পাবলিশ করে যাচ্ছি আমার চ্যানেলে।
Comments are closed.