লেখালেখি করে অনলাইনে ইনকাম করার ১০টি জনপ্রিয় উপায়
বর্তমানে অনলাইনে ইনকাম করার জন্য কন্টেন্ট রাইটিং বা লেখালেখি পেশাটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেকেউ এখন চাইলেই নিজের একটি ওয়েবসাইট খুলে যেকোনো জায়গা থেকে লেখালেখি করতে পারে।
পূর্বে এমন একটি সময় ছিলো যখন মানুষ লেখালেখি করার জন্য শুধুমাত্র বইকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতো। নিজের লেখালেখি করার ইচ্ছা হলেই সেটা বই আকারে প্রকাশ করতো। এখনো এই বইয়ের মাধ্যমটিও রয়েছে তবে যুগের পরিবর্তনে অনেক কিছু চলে এসেছে।
এখন নিজের লেখা প্রকাশ করার জন্য শুধু বইয়ের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় না, আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে যেমন ফেসবুক, টুইটার সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, এছাড়াও আছে ওয়েবসাইট প্লাটফর্ম।
লেখালেখি করে রয়ালটি ইনকাম করা যায়। রয়ালটি ইনকাম বলতে আপনি জিনিসটি একবার তৈরি করবেন কিন্তু সেটা থেকে লাইফটাইম ইনকাম আস্তেই থাকবে। আর এই কারনেই বর্তমানে অনেকে এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এই জন্য আজকেই এই পর্বে আমি লেখালেখি করে অনলাইন থেকে ইনকাম করার ১১টি জনপ্রিয় উপায় বলবো যেগুলোর এক বা একাধিক সেক্টরে কাজ করে আপনি অন্যদের মতো রয়ালটি ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন।
তো চলুন শুরু করা যাক,
লেখালেখি করে অনলাইনে ইনকাম করার ১০টি উপায়
1. ওয়েবসাইটে লেখালেখি করে ইনকাম করাঃ
লেখালেখি করে অনলাইনে ইনকাম করার ১১টি জনপ্রিয় উপায়ের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ওয়েবসাইটে লেখালেখি করে অনলাইন থেকে ইনকাম করা।
নিজের একটি ওয়েবসাইট খুলে সেখানে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়, টিপস এবং ট্রিক্স সহ নিজের জানা অজানা বিষয়ে লেখালেখি করা যেতে পারে।
যেহেতু নিজের ওয়েবসাইট তাই নিজের ইচ্ছামতো লেখালেখি করা যাবে। তবে এখানে আপনাকে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে একটি ধারনা রাখতে হবে। তবে সেটা বাধ্যতামূলক না।
আপনি যেকোনো একজন ওয়েব ডেভেলপারকে দিয়ে একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন।
2. গুগল এডসেন্স থেকে ইনকাম করাঃ
লেখালেখি করে অনলাইনে ইনকাম করার এখন যেই উপায়টির কথা বলবো সেটা প্রায় ৯০% ওয়েবমাস্টার বা যারা ওয়েবসাইটে লেখালেখি করে তারা ফলো করে থাকে। আর তার নাম হচ্ছে গুগল এডসেন্স।
গুগল এডসেন্স থেকে ইনকাম করা এখন আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিটি ওয়েবসাইট মালিকদের। অনেকে এটাকে সোনার হরিন বলে।
অথচ এমন একটি সময় ছিলো যখন ওয়েবসাইটে শুধু লেখালেখি করা যেতো কিন্তু কোনো ইনকাম করার উপায় ছিলো না।
কিন্তু ২০০৩ সালে যখন প্রথম গুগল এডসেন্স চলে আসলো তখন আসতে আসতে প্রায় সব ওয়েবমাস্টাররা এই গুগল এডসেন্স ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে নিজের ওয়েবসাইট থেকে।
গুগল এডসেন্স একটি অনলাইন এডভারটাইজিং প্লাটফর্ম যেখানে ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কোম্পানির এড দেখানোর মাধ্যমে ইনকাম করা যায়।
আরো পড়ুনঃ
- ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট শেখার পরিপূর্ণ গাইডলাইন
- আমি কিভাবে ফ্রিতে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখলাম
- ওয়ার্ডপ্রেস শিখে কিভাবে লাখ টাকা ইনকাম করা যায়
- এফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার বই পিডিএফ ডাউনলোড
3. আর্টিকেল বিক্রি করে আয় করাঃ
লেখালেখি করে অনলাইনে ইনকাম করার আরো একটি জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে অন্যদের কাছে আর্টিকেল বিক্রি করে আয় করা। এটাকে সার্ভিস হিসেবে ধরা যেতে পারে।
এমন অনেকেই আছে যাদের লেখালেখি করার অনেক ইচ্ছা রয়েছে কিন্তু তাদের লেখাগুলো মানসম্মত হয় না। যার কারনে তারা অন্য কারো লেখা কপি করে। ফলে এই সেক্টরে সাফল্য পায় না।
তাই আপনি যদি ভালো লেখালেখি করতে পারেন, আপনার লেখাগুলো যদি মানসম্মত হয় তাহলে এটাকে সার্ভিস হিসেবে অন্যদের কাছে বিক্রি করে আয় করতে পারেন।
নিজের ওয়েবসাইটে একটি পেজ বা সেকশন তৈরি করে আপনার সাভিসটি তুলে ধরতে পারেন। ফলে যারা ওয়েবসাইটে আসবে তারা আপনার সার্ভিসটি দেখতে পাবে। যার প্রয়োজন সে কিনবে। আর আপনার বাড়তি একটি ইনকাম জেনারেট হবে।
4. লেখালেখি করে ফ্রিল্যান্সিং করাঃ
বর্তমানে অনলাইন থেকে ইনকাম করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ঘরে বসে দেশ বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কাজ করা যায় শুধুমাত্র এই ফ্রিল্যান্সিং মাধ্যমেই।
যেকোনো বিষয় শিখেই ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। লেখালেখি করে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনলাইন থেকে ভালো পরিমানের ইনকাম জেনারেট করা যায়।
বর্তমানে ইন্টারনেটে প্রতি মিনিটে কয়েক হাজার ওয়েবসাইট চালু হচ্ছে। আর সেখানে প্রয়োজন হচ্ছে হাজার হাজার লেখক, আর তার সাথে প্রকাশ হচ্ছে হাজার হাজার কন্টেন্ট বা লেখা। আর এই জন্য ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে লেখালেখির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
প্রতিটি ১ হাজার লেখার জন্য বায়ারদের কাছে ১০ থেকে ২০ ডলার পর্যন্ত চার্জ করা যায়। তবে লেখাগুলো হতে হবে মানসম্মত, কপিমুক্ত, নির্ভুল বানানের সুন্দর কন্টেন্ট বা লেখা।
5. আর্টিকেল লিখার জব/চাকরি করাঃ
লেখালেখি করে অনলাইনে ইনকাম করার আরো একটি জনপ্রিয় উপায় হলো কন্টেন্ট রাইটিং জব বা চাকরি। নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখির পাশাপাশি অন্য কারো ওয়েবসাইটে লেখালেখি করার মাধ্যমেও ইনকাম করা যায়।
বর্তমানে প্রায় সব ধরনের কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে, নিজেদের পণ্য সম্পর্কে লেখালেখি করার প্রয়োজন হয়।
আপনার লেখা যদি মানসম্মত হয় তাহলে তাদের প্রতিষ্ঠানের হয়ে লেখালেখি করে ইনকাম করতে পারবেন। ফুল টাইম বা পার্ট টাইম লেখক হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
আর এই লেখা লেখি করার জন্য কম্পিউটার থাকা আবশ্যক না, আপনি মোবাইল দিয়েও অনলাইনে ইনকাম করতে পারবেন।
এছাড়াও যারা এফিলিয়েট মার্কেটিং করে, বিভিন্ন পণ্যের প্রচার প্রচারনা করার মাধ্যমে ইনকাম করে, আপনি তাদের সাথেও কাজ করতে পারবেন।
6. ওয়েবসাইট বিক্রি করে ইনকাম করাঃ
বর্তমানে ওয়েবসাইট বিক্রি করেও ইনকাম করা যায় যাকে ইন্টারনেটের ভাষায় ওয়েবসাইট ফ্লিপিং বলা হয়।
ওয়েবসাইটে যদি ভিজিটর অনেক বেশি থাকে, ইনকাম যদি মাসে ১০০/৫০০ ডলার হয় তাহলে সেই ওয়েবসাইটটি ইনকামের ৩০ গুন দামে কয়েক লক্ষ টাকায় বিক্রি করা যায়।
অনলাইনে ওয়েবসাইট বিক্রি করার অনেক ট্রাসটেড ওয়েবসাইট রয়েছে যেমন দুইটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হচ্ছে ফ্লিপ্পা এবং ইম্পায়ার ফ্লিপ্পা।
উপরোক্ত দুটি ওয়েবসাইটে নিজের ওয়েবসাইট বিক্রি করার জন্য লিস্টিং করতে হয়। পরবর্তীতে যদি কোনো বায়ার পছন্দ করে তাহলে সাথে সাথে ভালো দামে কিনে নেয়। আর সেই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নিজের দেশে নিয়ে আসা যায়।
পড়তে পারেনঃ
7. লোকাল এড বা স্পন্সরশীপ থেকে ইনকাম করাঃ
বর্তমানে এডভারটাইজিং এর মাধ্যমে দুইভাবে ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করা যায়,
- গুগল এডসেন্স
- লোকাল এড বা স্পন্সরশীপ
ওয়েবসাইটে যদি বেশি পরিমান ভিজিটর থাকে তাহলে লোকাল এড বা স্পন্সরশীপ থেকে যেই ইনকামটা হয় সেটা গুগল এডসেন্স এর ইনকাম থেকেও অনেক বেশি।
তবে স্পন্সরশীপ পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইট এর টপিক বা বিষয়, কন্টেন্ট, ভিজিটরের পরিমান মানসম্মত থাকতে হবে। তখনই আপনি লোকাল এড বা স্পন্সরশীপ পাবেন।
স্পন্সরশীপ পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে নিজের ইমেইল দিয়ে রাখবেন। বেশিরভাগ কোম্পানিরা স্পন্সরশীপ দেয়ার জন্য এই মাধ্যমটাই ব্যবহার করে থাকে।
8. আর্টিকেল রাইটিং কোর্স বিক্রি করাঃ
আজকাল আর্টিকেল রাইটিং কোর্স বিক্রি করেও অনেকে ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করছে। তবে এটা নতুনদের জন্য না।
যারা এই ব্লগিং সেক্টরে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে, যাদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি শুধুমাত্র তারাই পরবর্তীতে নিজের সেই ৪/৫ বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে একটি আর্টিকেল রাইটিং কোর্স তৈরি করে।
যারা এই ব্লগিং সেক্টরে কাজ করতে চায়, একটি হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট কিভাবে লিখতে হয় সেটা শিখতে চায় তারা কোর্সটি ক্রয় করে থাকে। তবে কোর্সটি হতে হবে প্রফেশনাল, মানসম্মত এবং রিসোর্সফুল।
9. নিজের পণ্য ওয়েবসাইটে বিক্রি করে ইনকাম করাঃ
লেখালেখি করে অনলাইন থেকে ইনকাম করার যে উপায়টি সম্পর্কে বলবো সেটি বাধ্যতামূলক না, তবে সচারচর ওয়েবমাস্টাররা এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে। আপনিও চাইলে করতে পারেন সেটি হচ্ছে নিজের পণ্য ওয়েবসাইটে বিক্রি করে ইনকাম করা।
নিজে যদি কোনো পণ্য তৈরি করতে পারেন বা নিজের যদি বিক্রি করার মতো কোনো পণ্য থাকে তাহলে সেটি ওয়েবসাইটে বিক্রি করা যেতে পারে।
10. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করাঃ
লেখালেখি করে অনলাইন থেকে ইনকাম করার ১০টি জনপ্রিয় উপায়ের মধ্যে সর্বশেষ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনকাম করা।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে অন্য কোম্পানির যেকোনো পণ্য নিজের ওয়েবসাইটে প্রমোট করা।
ফলে সেই প্রমোটকৃত পণ্য যদি বিক্রি হয় তাহলে সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন ইনকাম করা যায়।
বেশিরভাগ ওয়েবমাস্টাররা লেখালেখির মাধ্যমে ওয়েবসাইট থেকে দুইভাবে ইনকাম করে। প্রথমটি হচ্ছে গুগল এডসেন্সে এবং তারপরে আসে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। আর একেকটি এফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইটের দামও অনেক বেশি হয়।
তো এই ছিলো, লেখালেখি করে অনলাইন থেকে ইনকাম করার ১০টি জনপ্রিয় উপায় যেগুলোর এক বা একাধিক সেক্টরে কাজ করে আপনি অনলাইনে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।
এছাড়াও আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস, ইউটিউবিং, টেকনোলজি বিভিন্ন টিপ্স এন্ড ট্রিক্স, ডিজিটাল স্কিল শিখতে চান তাহলে আমার ইউটিউব চ্যানেল আজই সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন। কারন আমি প্রতিনিয়ত ডিজিটাল স্কিল বিষয়ক টিউটোরিয়াল পাবলিশ করে যাচ্ছি আমার চ্যানেলে।